কা’বার হাতীম যেভাবে এলো

কা’বা শব্দের অর্থ হলো চার দেয়াল বিশিষ্ট ঘর। নবিজী সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মেরও অন্তত আড়াই হাজার বছর আগে, ইবরাহিম আলাইহিস সালাম এবং ইসমাইল আলাইহিস সালাম মিলে আল্লাহর ইবাদাত করার জন্য যে ঘর নির্মাণ করেন, সেটাকেই আমরা কা’বা হিশেবে চিনি। সেই ঘরটা চার দেয়াল বিশিষ্ট ছিলো বলে সেটাকে কা’বা বলা হয়।

নবিজী সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন যুবক। একবার মক্কায় ভয়াবহ রকমের বন্যা হয়। আল্লাহর ঘর কা’বার অবস্থান সমতল ভূমিতে। কা’বাকে ঘিরে রেখেছে ছোট-বড় অসংখ্য পাহাড়। বিধ্বংসী বন্যার ফলে সেবার পাহাড়গুলো থেকে অতি-মাত্রার পানির ঢল নেমে আসে এবং পানির সেই স্রোতে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে কা’বা ঘরের দেয়াল। বন্যার কারণ তো ছিলোই, সে বছর অনাকাঙ্খিত আরেকটা ঘটনা ঘটে যায় কা’বাকে ঘিরে। একদল চোর কা’বার দেয়াল টপকে ভেতরের মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি করে নিয়ে যায়। এই ঘটনা কুরাইশ সহ সকল গোত্রকে হতভম্ব করে দেয়। পবিত্র কা’বা ঘরের সাথে এমনকিছু কেউ করতে পারে—এটা ছিলো সকলের ধারণার অতীত!

বন্যার ক্ষয়ক্ষতি এবং চুরির ঘটনা—দুই ঘটনাকে সামনে রেখে কা’বা ঘরের সংস্কার জরুরি হয়ে পড়লো। এ নিয়ে কুরাইশ বংশীয় নেতারা দফায় দফায় আলোচনা চালিয়ে গেলো। অবশেষে সিদ্ধান্ত হলো যে—কা’বা ঘর সংস্কার করা হবে। কোন গোত্র কা’বা ঘরের কোন পাশ সংস্কার করবে সেটাও নির্ধারিত হয়ে গেলো বৈঠকে। সংস্কার কাজ শুরুর আগে একটা বিষয়ের ওপর অনেকবেশি জোর দেওয়া হয়। সংস্কারের দায়িত্বপ্রাপ্ত গোত্রগুলোকে বলে দেওয়া হয়—সংস্কার কাজে তারা যেন কেবল হালাল উপার্জন থেকেই খরচ করে। কোন ধরণের ব্যভিচার, সুদ কিংবা যুলুম থেকে প্রাপ্ত অর্থ যেন কা’বা ঘরের সংস্কার কাজে ব্যবহার না করে।

কা’বা ঘরের উত্তরাংশের দেয়াল সংস্কারের দায়িত্ব পড়ে কুরাইশের বনু আদি বিন কা’ব বিন লুওয়াই বংশের ওপর। তারা তাদের হালাল উপার্জন দিয়েই সংস্কার কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু মাঝপথে এসে তাদের হালাল অর্থ ফুরিয়ে যায়। যেহেতু কা’বা অত্যন্ত পবিত্র একটা জায়গা, তাই হারাম উপার্জনের অর্থ কা’বার সংস্কার কাজে ব্যয়ের চিন্তা তারা কল্পনাতেও আনলো না। কিন্তু, এদিকে বনু আদি বিন কা’ব বিন লুওয়াই বংশের হাতেও তো হালাল উপার্জন নেই। তাহলে কী হবে?

সিদ্ধান্ত হলো—বনু আদি বিন কা’ব বিন লুওয়াই বংশ কা’বা ঘরের উত্তরাংশের যেটুকু সংস্কার কাজ সমাপ্ত করতে পারলো না, সেটুকু ওভাবেই অসমাপ্ত থেকে যাবে। সেটাই হলো এবং উত্তরাংশের ওই অংশটুকু অসমাপ্ত থেকে গেলো। বনু আদি বিন কা’ব বিন লুওয়াই বংশের কাঁধে সংস্কারের দায়িত্বে পড়া মূল কা’বার সাত হাত অংশকে বাইরে রেখেই নির্মাণ করা হয় কা’বার দেয়াল। বাইরে থেকে যাওয়া কা’বার সেই অংশটুকুকে কালের পরিক্রমায় আমরা ‘হাতীম’ বলে জানি। ‘হাতীম’ শব্দের অর্থ হলো ‘পরিত্যক্ত’। আজও সেই অসমাপ্ত অংশটুকুর বাইরে দিয়ে হাজিদের কা’বা ঘর তাওয়াফ করতে হয়।

আরিফ আজাদ
আরিফ আজাদ

আরিফ আজাদ একজন লেখক এবং সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাক্টিভিস্ট। ২০১৭ সালে 'প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ' বইয়ের মাধ্যমে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন। লিখেন বিশ্বাসের কথা, চূর্ণ করেন অবিশ্বাসের আয়না। লেখালেখির পাশাপাশি তিনি ঘুরতে এবং বই পড়তে পছন্দ করেন।

Articles: 46

7 Comments

  1. আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া আশা করি ভাল আছেন পোস্টগুলা প্রতিদিন দিলে অনেক উপকৃত হতাম

    • আলহামদুলিল্লাহ, নতুন কিছু জানা হলো।কাবার অর্থও জানতাম না সেটাও জানা হলো।যাজাকাল্লাহ।

  2. মাশা-আল্লাহ, গুরুত্বপূর্ণ একটি অজানা বিষয় জানিতে পারলাম।
    জাজাকাল্লাহ খাইরান।

  3. আলহামদুলিল্লাহ নতুন কিছু জানলাম।
    জাযাকাল্লাহু খাইরান।

Leave a Reply to Tahera Tasnim BushraCancel Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *