গতকাল একটা রেস্টুরেন্টে খেতে বসেছি আমরা চার বন্ধু। রেস্টুরেন্টের মেনু হাতে যিনি এলেন তাকে আমাদের একজন বললেন, ‘এখানে তো সেট মেনুগুলো ১:৩, ১:৪ এর কোনো সেট মেনু নেই?’
মেনু হাতে আসা হোটেল-বয় জবাব দেওয়ার আগে সম্মুখে উপবিষ্ট রেস্টুরেন্ট ম্যানেজার গলা চড়িয়ে বললেন, ‘মেনুতে কোথাও কি ১:৪ লেখা আছে? লেখা যেহেতু নাই, সুতরাং ১:৪ বলেও কিছু নাই এখানে’।
আমরা চারজনই রীতিমতো অবাক! মানে— কাস্টমারের একটা সরল প্রশ্নের জবাব একজন ম্যানেজার এভাবে দিতে পারে তা একেবারেই কল্পনাতীত! ব্যাপারটা সেখানে থেমে গেলে তো পারতো, কিন্তু লোকটা তার উপবিষ্ট জায়গা থেকে রীতিমতো ঝগড়া শুরু করে দিলো। গলার আওয়াজ এতো চড়া আর এতো তীর্যক যে— মনে হলো সে আমাদের কাছে টাকা পায় আর আমরা তাকে টাকা না দিয়ে ঘুরাচ্ছি।
আমি ছাড়া বাকি তিনজনের সকলেই এখানে সরাসরি সেবার সাথে জড়িত৷ একজন হসপিটালের মালিক, একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার এবং কনসাল্টেন্সি ফার্মের ব্যবসা করে, অন্যজন বাংলাদেশের দুইটা প্রতিষ্ঠিত প্রকাশনার কর্ণধার। তাদের প্রত্যেকেরই আছে গ্রাহক সেবার মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতা। এমতাবস্থায় সেই রেস্টুরেন্টে সেবার এমন নতুন রূপ দেখে হতভম্ব না হয়ে উপায় কী!
সাধারণত যেটা হয়, রেস্টুরেন্ট-বয়রা হয়তো খানিকটা মিস-বিহেইভ বা ভুলচুক করে ফেলে এবং ম্যানেজার এসে সেটা সামাল দেয়। সরি বলেন, নিজে যুক্ত হয়ে সমাধান করে দেন। কিন্তু রেস্টুরেন্ট বয়গুলো আমাদেরকে কমপক্ষে ত্রিশ বারের বেশি সরি বললেও, ম্যানেজার সাহেব তার ঝগড়াটে গলার আওয়াজ চালিয়েই যাচ্ছেন অনবরত। আমাদের তো হাসবো না কাঁদবো মতো অবস্থা!
যাহোক, বের হয়ে আমরা অন্য রেস্টুরেন্টে ঢুকলাম। খাবার অর্ডার করার পরে আমাদের একজন খানিক আগের বাজে অভিজ্ঞতার ধকল থেকে আমাদের টেনে তুলতে কথা শুরু করেন এভাবে— ‘দেখুন, পুরুষ মানুষের জীবনটা আসলে গুলিস্তান থেকে চিটাগং রোড আসার সময়টুকুর মতো। এর ভেতরে সে মুখোমুখি হতে পারে অনেক অনেক ঘটনার। কেমন ঘটনা সেগুলো? প্রথমে তাকে আধ ঘণ্টা গুলিস্তানে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হতে পারে। বাসে সিট না থাকলে কখনো দাঁড়িয়ে, কখনো ঝুলেও তাকে আসতে হয়।
দাঁড়াতে গেলে আবার সামনের মানুষেরা ঠেলতে ঠেলতে তাকে পেছনে পাঠাতে থাকবে। যদি সিট পাওয়া যায়— সেই সিট ভাঙা হতে পারে, হতে পারে সেই সিট খুব চাপা। ভালোমতো বসা যায় না। বাসের হেল্পার এসে হয়তো ৫/১০ টাকা বেশি দাবি করবে, সেটা নিয়েও একপশলা বাক-বিতণ্ডা হবে। নামার সময় আবার দ্রুত সময়ে নামতে হবে তাকে, বাস ড্রাইভারের ভীষণ তাড়া— সুন্দর করে যাত্রী নামানোর পর্যাপ্ত সময় তার হাতে থাকে না।
এই যে এতোসব ঘটনা, এগুলোই জীবন। পুরুষ মানুষকে এসবে অভ্যস্ত হয়ে যেতে হয়। নারীদের এসব তুলনামূলক অনেক কম ফেইস করা করা লাগে, কিন্তু মধ্যবিত্ত পুরুষের জীবনে এসব একেবারে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। সুতরাং— আজকের ঘটনাটা আমরা যতো দ্রুত ভুলে যাবো, ততোই কল্যাণ।
আমার বন্ধুটার কথা আসলে সম্পূর্ণটাই সত্য। দুনিয়ার জীবনকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা এভাবে সাজিয়েছেন— এখানে কারো আচরণে আপনি আকাশ থেকে পড়বেন, কারো কারো আচরণ দেখে আপনার ইচ্ছে হবে মাটির তলায় ঢুকে পড়তে। বিপরীতদিকে— জীবনে আপনি এমনকিছু মানুষেরও সন্ধান পেয়ে যাবেন যে— এদেরকে পেয়েই একটা জীবন আপনার ধন্য মনে হবে। এসব মিলিয়েই আসলে জীবন।
আমি এমনকিছু মানুষকে চিনি যাদের সাথে কথা বললে মনে হয় পারলে কলিজাটা কেটে খাওয়ায় আমাকে, কিন্তু পশ্চাতে তারা আমার যে নিন্দা-মন্দ করে তা শুনেও আমাকে আকাশ থেকে পড়তে হয়। আমি তাদের দুই অবস্থা কোনোভাবেই মিলাতে পারি না। এমন অনেককে চিনি যারা দ্বীন আর ধর্ম নিয়ে সে কী সোচ্চার, কিন্তু ব্যক্তিগতজীবনে তাদের অসততা, তাদের কপটতা আর ভণ্ডামিগুলো দেখে আশ্চর্য বনে যাই— কীভাবে পারে!
আবার, সততা, সত্যবাদিতা, দ্বীন আর ধর্ম থেকে জ্ঞাতসারে একচুলও বিচ্যুত হতে রাজি নয়— সেটা ব্যক্তিজীবন আর কর্মজীবন যেখানেই হোক— এমন অনেক লোককেও জীবনে আলহামদুলিল্লাহ পেয়েছি।
তো, জীবন আসলে এটাই— গুলিস্তান থেকে চিটাগং রোড যাওয়ার রাস্তাটুকু। সেই সময়টুকুতে ভালো ব্যাপার যেমন ঘটতে পারে, খারাপ ব্যাপারও ঘটতে পারে ততোধিক। এসবকে সামলে নিয়েই একটা জীবন বাঁচতে হয়।
Thanks a lot, sir. Alhamdulillah …..
মাশাল্লাহ। আল্লাহ আপনার দুনিয়া ও আখিরাতকে কল্যানকর করুক।আমিন…..
জাজাকাল্লাহ খাইরান।
মাশা আল্লাহ
অসাধারণ।
জাজাকাল্লাহ খাইরান।