পশ্চিমের ট্রান্সতত্ত্বে ব্রাত্য ডকিন্স

নিউ এথেইজম নিয়ে পড়াশুনা করেন বা জানাশোনা আছে, অথবা নিদেনপক্ষে বাংলাদেশি অন্তর্জালীয় কোনো নাস্তিকের লেখাজোকা জীবনে বার কয়েক চোখে পড়েছে এমন যেকারো কাছে রিচার্ড ডকিন্স পরিচত নাম।

বিবর্তনবাদের ধোঁয়া তুলে নাস্তিকতার প্রচার, প্রসারে ডকিন্স যে ভূমিকা রেখেছে, নিকট অতীতে এমন অবদান অন্যকোনো একক ব্যক্তি রাখতে পারেনি।তাই, ‘নিউ এথেইজম’কে যদি একটা ‘ধর্ম’ মনে করা হয়, এবং সেই ধর্মের যদি কোনো পয়গম্বর থাকা লাগে, রিচার্ড ডকিন্স হচ্ছেন সেই নিউ এথেইজম ধর্মের পয়গম্বর।

কিন্তু, ঘটনা ঘটেছে অন্য জায়গায়। ১৯৯৬ সালে American Humanist Association ডকিন্সকে ‘Humanist Of The Year’ পুরস্কার দেয় তার কাজকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ। সম্প্রতি জেন্ডার আইডেন্টেটি ইস্যুতে (মনে মনে মেয়ে আর মনে মনে ছেলে ভাবা) রিচার্ড ডকিন্স এমন একটা পজিশান গ্রহণ করে যেটা পশ্চিমা নীতির সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক হয়ে দাঁড়ায়। মনে মনে ছেলে আর মনে মনে মেয়ে ভাবার এই ধারণাকে ডকিন্স অস্বীকার করে এবং জন্মগত লিঙ্গ পরিচয়কেই আসল এবং প্রকৃত পরিচয় বলে তুলে ধরে।

ডকিন্স বলেন, ‘Sex really is binary. You’re either male or female, and it’s absolutely clear you can do it on gamete size. You can do it on chromosomes. To me, as a biologist, it’s distinctly weird people can simply declare ‘I am a woman though I have a penis’.

ডকিন্সের এই অবস্থানের পর পশ্চিমা শরীর বিকৃতিবাদী সমাজে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় এবং ১৯৯৬ সালে দেওয়া ‘Humanist Of The Year’ পুরস্কারও ডকিন্সের কাছ থেকে প্রত্যাখ্যান করে নেয় American Humanist Association।

ডকিন্সকে মুখোমুখি হতে হচ্ছে নানান সমালোচনার। নাস্তিকতার প্রচার, প্রসারে তার এযাবতকালের কাজ, অবদান ইত্যাদি বাদ দিয়ে মুখ্য হয়ে উঠেছে তার এই শরীর বিকৃতিবাদ বিরোধি অবস্থান।

ডকিন্সের এই অবস্থা দেখে আমার একটা দৃশ্য খুব মনে পড়েছে। প্রায় বছর পনেরো আগে, ইংল্যান্ডে একবার এই নিও-এথেইজমের ব্যানারে বাস ক্যাম্পেইন করেছিল ডকিন্স এণ্ড গং। সেই বাসে বড় বড় হরফে তারা লিখেছিলো— ‘There’s probably no God. Now stop worrying & enjoy your life’.

জীবনকে যথেচ্ছ উপভোগ করার পরামর্শ এই ডকিন্সরাই একদা ফেরি করে বেড়িয়েছেন। তাদের পরামর্শ মেনে যুগ আজ এমন এক সন্ধিক্ষণে ঢুকে পড়ছে যেখানে আজ ডকিন্সরাই আটকে যাচ্ছেন। এই শরীর বিকৃতিবাদ মানতে গেলে তাদের বিজ্ঞান ধর্মের বিশ্বাস টিকছে না, বিশ্বাস টিকাতে গেলে সমাজে টেকা যাচ্ছে না। ডকিন্সদের জন্য এ যেন শ্যাম রাখি না কূল রাখি অবস্থা!

আলহামদুলিল্লাহ, মুসলমান হিশেবে আমরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার প্রণীত জীবনবিধানকেই চূড়ান্ত বলে বিশ্বাস করি এবং মেনে নিই। সেই চৌদ্দ’শ বছর আগে আমাদের জন্য যা নাযিল হয়েছে, পৃথিবীর শেষদিন পর্যন্তও আমাদের জন্য সেসব সেভাবেই থাকবে। তাতে একচুল নড়চড়, একবিন্দু পরিবর্তন আসবে না।

ওহীর মতবাদে বিশ্বাসের এই হলো শান্তি। ক্ষণে ক্ষণে আপনাকে নিজের বিশ্বাস নিয়ে দ্বন্ধে পড়তে হয় না। অ্যাপলোজিস্ট হতে হয় না। আলহামদুলিল্লাহ, আমি মুসলমান।

আরিফ আজাদ
আরিফ আজাদ

আরিফ আজাদ একজন লেখক এবং সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাক্টিভিস্ট। ২০১৭ সালে 'প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ' বইয়ের মাধ্যমে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন। লিখেন বিশ্বাসের কথা, চূর্ণ করেন অবিশ্বাসের আয়না। লেখালেখির পাশাপাশি তিনি ঘুরতে এবং বই পড়তে পছন্দ করেন।

Articles: 46

3 Comments

  1. আল্লাহ তাআলা আপনার খিদমাহকে উম্মাহর জন্য আরো প্রসারিত করে দিন‌ । আমীন । অধমের পক্ষ থেকে একটি অনুরোধ, আপনার কিছু যোগ্য শিষ্য তৈরি করুন । যারা মিথ্যার বিরুদ্ধে আপনার মত শক্ত হাতে লড়াই করতে পারবে । এবং আপনার জন্য ‘সাদাকায়ে জারিয়া’ হবে ইনশাআল্লাহ ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *