যুগের ফিতনায় বাবা-মা’র দায়িত্ব

আমাকে মাথায় টুপি পরতে দেখে মাঝে মাঝে আয়িশাও টুপি পরতে চায়। ওর এমন আবদারে আমি তাকে বলি, ‘আম্মু, টুপি তো ছেলেরা পরে। তুমি তো মেয়ে বাবু। তোমাকে ওড়না পরতে হবে’।

ওর পরের প্রশ্ন—‘আমি মেয়ে বাবু কেনো?’

-‘আল্লাহ যে তোমাকে মেয়ে বাবু বানিয়েছেন, তাই আর কী’।

একদিন আমার দাড়ি ধরে সে বললো, ‘বাবা, এগুলো কী?’

আমি বললাম, ‘এগুলো হলো দাড়ি’।

-‘তোমার দাড়ি আছে কেনো?’

-‘আমি যে ছেলে, তাই’।

-‘আমার কি দাঁড়ি হবে?’

-‘না আম্মু। তুমি তো মেয়ে বাবু। মেয়েদের তো দাড়ি হয় না। ছেলেদের দাড়ি হয়’।

দুনিয়া নিয়ে যারা খোঁজখবর রাখছেন তারা জানেন—আগামীর দুনিয়াতে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং যে ফিতনাটা আমাদের সন্তানদের সামনে হাজির হচ্ছে সেটা হলো—জেন্ডার আইডেন্টিটি। মানে—জৈবিকভাবে বা লিঙ্গভেদে এতোদিন যে জেন্ডার আইডেন্টিটি আমরা ধারন করতাম, আগামীর দুনিয়ায় নাকি সেভাবে আর ভাবা যাবে না।

এই দুনিয়ায় একটা ছেলে যদি নিজেকে ছেলের বদলে মেয়ে ভাবতে শুরু করে, তাহলে সমাজেও নাকি তাকে ‘মেয়ে’ বলেই স্বীকৃতি দিতে হবে। আর, একটা মেয়ে যদি নিজেকে মেয়ের বদলে ছেলে ভাবতে চায়, তাকেও ‘ছেলে’ হিশেবে মেনে নিতে হবে। এরচেয়ে ফালতু, আজগুবি, উদ্ভট আর বিকৃত চিন্তা আর কিছু হতে পারে? কিন্তু না—উত্তর আধুনিক জামানা যেহেতু সেভাবেই চাচ্ছে, গোটা দুনিয়াকে সেটাই নাকি মেনে নিতে হবে।

ঘটনা তো সেখানে শেষ হলেও পারতো। কিন্তু শুধু ছেলে আর মেয়ে নয়, কারো যদি মনে হয় যে সে আসলে মানুষ নয়—বিড়াল, পরিবর্তিত এই বিশ্বপরিস্থিতি বলছে তাকে বিড়াল বলেই স্বীকার করে নিতে হবে। কেউ যদি নিজেকে মানুষের বদলে গরু মনে করে, তাকে গরু ভাবতে হবে। কেউ যদি নিজেকে সাপ মনে করে, তাহলে তাকে সাপ হিশেবেই গণ্য করতে হবে।

ব্যাপারটা শুনে হাস্যকর মনে হলেও পশ্চিমে এসব নিয়ে বেশ হৈচৈ চলছে এবং নিজেদের বিড়াল, গরু ইত্যাদি ভাবতে থাকা মানুষেরও দেখা মিলে গেছে ইতোমধ্যেই। এগুলো নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে চলছে তুমুল তর্ক-বিতর্ক।

তারউপর হাজির হয়েছে সার্জারি করে জেন্ডার বদলে ফেলার হিড়িক। আগামীতে সমাজের জন্য এটা যে কীরকম সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে তা কল্পনাও করা যাচ্ছে না। বাংলাদেশে বসে এসবের অনেককিছুই অবাস্তব মনে হতে পারে, তবে যারা ইউরোপ-আমেরিকায় আছেন, তারা ইতোমধ্যেই বিষয়টা টের পেতে শুরু করেছেন।

আমরা কখনোই চাই না আমাদের সন্তানেরা এই ফিতনার মাঝে নিপতিত হোক। তাই এখন থেকেই তাদেরকে তাদের জেন্ডার সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে হবে। তাদের শেখাতে হবে কোনটা ছেলেদের কাজ আর কোনটা মেয়েদের। কোন কাপড়টা ছেলেরা পরে আর কোনটা মেয়েরা। কোন বৈশিষ্ট্যটা ছেলেদের থাকে আর কোন বৈশিষ্ট্য মেয়েদের সেই বোধ খুব ছোটবেলা থেকেই তাদের মাঝে তৈরি করতে হবে।

নিজের জেন্ডার সম্পর্কে ছোট থেকেই যদি তারা পর্যাপ্ত ধারণা নিয়ে বড় হয়, তাহলে আমাদের কোনো শরিফ নিজেকে কখনোই শরিফা ভাববে না। যুগের বিকৃতিতে তাদের পথ হারাবার সম্ভাবনাও অনেকাংশে কমে যাবে, ইন শা আল্লাহ।

আরিফ আজাদ
আরিফ আজাদ

আরিফ আজাদ একজন লেখক এবং সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাক্টিভিস্ট। ২০১৭ সালে 'প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ' বইয়ের মাধ্যমে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন। লিখেন বিশ্বাসের কথা, চূর্ণ করেন অবিশ্বাসের আয়না। লেখালেখির পাশাপাশি তিনি ঘুরতে এবং বই পড়তে পছন্দ করেন।

Articles: 46

One comment

  1. এধরনের লেখনীর মাধ্যমেই তরুণ সমাজকে সচেতন করতে হবে ::ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন সচেতনতামূলক বই পড়ার প্রতি তাদের আগ্রহ বাড়িয়ে তুলতে হবে

Leave a Reply to MostafaCancel Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *