পর্দা-হিজাব কতোখানি ধর্ষণ ঠেকায়? কিংবা, পর্দার বিধান কি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া’তায়ালা এজন্যেই নাযিল করেছেন যে— যাতে করে সমাজ থেকে ধর্ষণ, যিনা-ব্যভিচার উঠে যায়?
আমার ধারণা এটা একটা ভুল প্রশ্ন। মহিলারা পর্দা-হিজাব করলে ধর্ষণের হার হয়তো কমবে, হয়তো যিনা-ব্যভিচারও হ্রাস পাবে, কিন্তু তা শুধু পর্দা-হিজাব করছে বলেই নয়, ইসলামি অনুশাসন মানুষ মেনে চলছে বলেই। একটা সমাজে পুরুষেরা যদি দৃষ্টির হেফাযত করে এবং মহিলারা যদি পর্দায় নিজেদের আবৃত করে, এবং উভয়দলের অন্তরে যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ তাকওয়া বিদ্যমান থাকে, তাহলে ওই সমাজ থেকে ধর্ষণ সহ যাবতীয় অনৈতিক কাজের পরিমান একেবারে কমে আসবে। কিন্তু তবুও কথা হলো— ধর্ষণ কমানোর জন্যই কেবল পর্দা-হিজাবের বিধান আসেনি কিন্তু।
এমন একটা দেশের কথা চিন্তা করা যাক যেখানে শারীয়াহ আইন পুরোপুরি কার্যকর। সেখানে চুরি করলে হাত কাটার বিধান আছে, যিনা-ব্যভিচারে পাথর মেরে হত্যার বিধান আছে। রাষ্ট্রীয় আইনে যেহেতু ধর্ষণ জাতীয় ঘটনার কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়, সেখানে কোন পুরুষের সাধ্য নেই কোন মহিলার দিকে হাত বাড়ায়।যেহেতু সেখানে কোন ধর্ষণ হয় না, রাষ্ট্র হতে দেয় না, রাষ্ট্র মারাত্মক পর্যায়ের তৎপর এই ব্যাপারে— তাহলে কি ওই দেশের নারীরা পর্দা-হিজাব না করলেও চলবে?
পর্দা-হিজাবের এক এবং একমাত্র উদ্দেশ্যই যদি হয় ধর্ষণ-ব্যভিচার কমানো, তাহলে যে রাষ্ট্রে এই জিনিসগুলোর অস্তিত্ব-ই নেই, সেখানে তো মহিলাদের হিজাব-পর্দা না করলেও চলে, তাই কি? কিন্তু তা আসলে সত্য নয়। মহিলারা হিজাব-পর্দা করে কারণ তা আল্লাহর নাযিলকৃত একটা বিধান। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া’তায়ালা কর্তৃক নির্ধারিত ড্রেস-কোড এটা তাদের জন্য। এটা ধর্ষণ কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে ঠিক, কিন্তু একমাত্র ভূমিকা পালনকারী কোন জিনিস নয়।
সমাজ কিংবা রাষ্ট্র থেকে ধর্ষণ কমাতে চারটে জিনিস জরুরি— রাষ্ট্রের আইন, পোশাক-আশাকে আল্লাহর বিধান মেনে চলবার মতোন আনুগত্য, পুরুষের নজরের হেফাযত এবং সুষম ইসলামি শিক্ষা।
রাষ্ট্রে আইন আছে, কিন্তু পোশাক-আশাকে সবাই বেশ খোলামেলা— ধর্ষণ কমবেনা। জোর-জবরদস্তি করে মানুষকে কোন জিনিস বেশিদিন গিলানো যায় না।
পোশাক ঠিক আছে, কিন্তু আইন নেই— মানুষ বেপরোয়া হয়ে উঠবেই।
সব-ই আছে, কিন্তু শিক্ষার সুষম বিকাশ নেই— মানুষ অজ্ঞ-ই থেকে যাবে। কোনটা অপরাধ, কোনটা অপরাধ নয়— তা মানুষ বুঝতেই পারবে না।
কিন্তু যখনই কোন ধর্ষণ-কান্ড সমাজে ঘটে, আমাদের সমস্ত নজর, সমস্ত মনোযোগ গিয়ে জড়ো হয় নারীর পর্দা-হিজাবে। মেয়েটা কেনো পর্দা করলো না এই হয়ে দাঁড়ায় আমাদের প্রধান মাথাব্যথা। কিন্তু ছেলেটা কেনো দৃষ্টির হেফাযত করলো না— সেই প্রশ্নটা কেউ তুলে আনে না। রাষ্ট্রে কেনো আইন নেই, সেই প্রশ্ন আমরা কেউ তুলতে পারি না। কেনো ইসলামি শিক্ষার সুষম বিকাশে মসজিদের মিম্বারগুলো থেকে ধর্ষণ-যিনা-ব্যভিচারের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আলাপের বদলে কাঁদা ছুঁড়াছুঁড়ির বয়ানটাই বেশি ভেসে আসে— সেই প্রশ্নটাও চাপা পড়ে যায়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া’তায়ালা ধর্ষণ, যিনা-ব্যভিচারের জন্য রাষ্ট্রীয় আইনের বিধান দিয়েছেন— পাথর নিক্ষেপে হত্যা। নারীদের জন্য ফরয করেছেন— পর্দা-হিজাব। পুরুষের জন্য ফরয করেছেন— দৃষ্টির হেফাযত। আহলে ইলম তথা আলেম-ওলামার জন্য ফরয করেছেন— দ্বীনের সঠিক দাওয়াত পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু, ধর্ষণের ঘটনার পর আমরা সম্মিলিতভাবে বলি— ‘আরেহ! মেয়েটা পর্দা করেনি ক্যানো? যে মেয়ের পোশাকের ঠিক নেই, সে তো ধর্ষিত হবেই।
যে নির্যাতিত হয়, যে মাজলুম, তার পোশাকের অবস্থার চাইতেও বেশি দরকারি হলো জালিমের অবস্থান নির্ণয় করাটা। আমরা দূর্বলের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ি, কিন্তু শক্তিমানের ছায়া মাড়াই না।
মাশাআল্লাহ অসাধারণ
Awesome
অসাধারণ!
আপনার প্রতিটি বই আমি সংগ্রহ করেছি।
আল্লাহ আপনাকে আরো প্রতিভা দান করুণ। আমিন।
মাশা-আল্লাহ। চমৎকার লেখনী।
মাশ আল্লাহ, দ্বীনের জন্য, আল্লাহর জন্য আপনার কলম আরো শাণিত হোক। আলহামদুলিল্লাহ ।
আপনার লেখাগুলো যতই পড়ি ততই হৃদয়ের বদ্ধ দরজা গুলো খুলে যায়????????????
চমৎকার লিখেছেন।আসলেই সবাই শুধু পর্দা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।কিন্তু অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলোর প্রতি তাকায় না।তাই পর্দাশীল নারীরাও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে।
মাশাআল্লাহ,, চমৎকার বিশ্লেষণ ।
স্যার,ফেসবুক, টুইটারের সব লেখা গুলো এখানে দিয়েন।আমি মহসিন কলেজে,চট্টগ্রাম দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ছি।পড়াশোনার জন্য আইডি ডিএক্টিভেট থাকে।আপনার কোনো লেখা মিস দিতে মন চায় না।অনেক কিছুই শিখছি আপনার কাছ থেকে। আল্লাহ আপনাকে ভালো রাখুক।আপনার কন্যাতুল্য।
As salamu alikum..I am a candidate of ssc 2021.. My opinion is same to you dear…May Allah ease ur study and together we’ ll shine.In sha Allah.
মাশাআল্লাহ অসাধারণ