নবিজীর দেখা পেলে

মাঝে মাঝে ভাবি
যদি স্মৃতি প্রতারণা করতো
আর পৃথিবী ফিরে যেতো আরো আদিম সময়ে—
সাড়ে চৌদ্দ’শ বছর আগে।

ধরা যাক একদিন
একটা পুরোনো মানুষ বিক্রির হাটে
একটা অগভীর কূপ আর হেলে পড়া
খেঁজুর গাছের পাশে
এক অনারব বণিক আমাকে নিলামে তুললো,
এবং এক আরব—
কিনে নিলো একেবারে সস্তা দামে।

যেহেতু যুগটা আদিম, এবং
আমাকে সে কিনে এনেছে
আদম বেচাকেনার হাট থেকে
সুতরাং সে আমার মনিব আর
আমি তার গোলাম৷
তার বেঁধে দেওয়া কাজ—
পানি টানা, বাগান দেখভাল আর মেষ চরাতে চরাতে
একদিন আমার কানে আসবে এমনকিছু
যা কখনো শুনিনি আগে।

পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া
কতিপয় অপরিচিত পথচারী এসে বলবে,
‘শোনো ভাই! গোলামি করো শুধু আল্লাহর!
তিনি ছাড়া আর কোন প্রভু নেই,
নেই ইশ্বর;

বিস্ময় বিমূঢ়তায় আমি জানতে চাইবো, ‘আল্লাহ? তিনি কে?’
‘তিনি একক এবং অদ্বিতীয়৷ তাঁর কোন অংশীদার নেই’
‘তিনি কোথায় থাকেন?’
‘রাহমান! তিনি আরশের ওপরে সমাসীন’।
‘কে তাঁকে চিনিয়েছেন?’
‘মুহাম্মাদ! তিনি আল্লাহর রাসূল’।
‘তিনি কি রাজা?’
‘তা নয়, তাঁর জীবন বড় সাদামাটা!’
‘গরিবদের সাথে মেশেন?’
‘গরিবেরাই তাঁর অধিক অনুসারী’।
‘অভাবীকে খাওয়ান?’
‘নিজের পাত্রেরটুকও তুলে দেন’।
‘তাঁর প্রচারিত বাণী কী?’
‘আহাদ! আহাদ! আল্লাহ এক! আল্লাহ এক!’

তারপর—
আমি ভুলে যাবো দুনিয়ার সমস্ত কথা;
সমস্ত গান আর কবিতা বিস্মৃত হয়ে
সেই ‘আহাদ’ শব্দই হয়ে উঠবে আমার একমাত্র ভাষা;

এবং সেই আরব ব্যক্তি
যে একদিন আমাকে কিনেছিলো
হাট থেকে, একেবারে সস্তা দামে
এতোদিন যার গোলামির শেকল পরানো
ছিলো আমার পদযুগলে
তার প্রভুত্ব ধরে রাখতে
আমাকে সে শুইয়ে দিবে তপ্ত বালুকাময় প্রান্তরে।

মাথার ওপরে গনগনে সূর্য, আর
পিটের নিচে কয়লা-পোড়া বালি;
তৃষ্ণায় আমার বুক ফেঁটে যাবে
তপ্ত বালির বিছানাও ফুলে ফেঁপে উঠবে
আমার গায়ের ঘামে
তবু আমার ভাষা হারাবে না।
‘আহাদ আহাদ বলে কাঁদতে কাঁদতে
অথবা
চিৎকার করতে করতে
নতুবা
ফোঁপাতে ফোঁপাতে আমি
দুনিয়াকে জানিয়ে দেবো— তোমাদের কারো গোলামিই আমি মানি না আর!

তারপর—
আমার চোখ ভেঙে ঘুম নামবে
পরীশ্রান্ত, ক্লান্ত আর ঘর্মাক্ত
ঘুমের আবেশে জড়ানো
স্বপ্নে ধরা দেবেন এক সুদর্শন মানব।
তিনি বলবেন— সুসংবাদ লও!
তোমাকে দান করা হয়েছে বিরল সম্মান।
‘আহাদ আহাদ’ বলে যে কন্ঠকে
উচ্চকিত করেছো আজ
বাতাসের রন্ধ্রে ভাসিয়ে দিয়েছো
যে তাওহিদের ব্যঞ্জনা
আজ হাত পেতে নাও তার পুরস্কার—
তোমার গলার সুরে প্রতিধ্বনিত হবে
গোটা দুনিয়া
তুমি হবে ইসলামের মুয়াজ্জিন।

তারপর এক ধনাঢ্য আরব লোক
আবু বাকার— ভারি ভালো মানুষ
আমাকে পুনরায় ক্রয় করে মুক্ত করে দেবেন।
মানুষের গোলামির শেকল ছেড়ে
আমি গায়ে জড়াবো তাওহিদের শেকল
যে শেকলে আমি পেয়ে গেছি শ্বাশ্বত মুক্তি!

মুহাম্মাদ সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম—
যার কাছ থেকে একদিন
ধার করেছিলাম ‘আহাদ’ শব্দ
আমাকে দেখে তিনি ভারি উচ্ছ্বসিত হবেন!
তাঁর অবয়বজুড়ে থাকা বেহেস্তের প্রশান্তি
আমার দেহ আর মনে
বইয়ে দেবে খুশির কল্লোল।
তাঁর দুহাতে চুমু খেতে খেতে আমি বলবো—
ফিদাকা ইয়া আবি ওয়া উম্মি ইয়া রাসূলাল্লাহ!
আমার পিতা মাতা আপনার তরে কোরবানি হোক
হে আল্লাহর রাসূল!

আলগোছে
তিনি আমাকে বুকে টেনে নিবেন;
বুকে পাথর চাপার যে যন্ত্রণা এতোদিন
আমাকে তাড়িয়ে বেড়াতো
নবিজীর আলিঙ্গনে সে ব্যথা উধাও হয়ে যাবে।

মাঝে মাঝে ভাবি
যদি স্মৃতি প্রতারণা করতো
আর পৃথিবী ফিরে যেতো আরো আদিম সময়ে—
সাড়ে চৌদ্দ’শ বছর আগে;
নবিজীর দেখা পাওয়ার আশা পেলে
আমি নিঃসংকোচে
হাটে মাঠে বিক্রি হতে রাজি
আরব আর অনারব—
যতো খুশি আমার বুকের ওপর তুলে দিক
শক্ত পাথর
নবিজীর আলিঙ্গন পেলে
বুকে উহুদ পাহাড় উঠে গেলেও ক্ষতি নেই।

আরিফ আজাদ
আরিফ আজাদ

আরিফ আজাদ একজন লেখক এবং সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাক্টিভিস্ট। ২০১৭ সালে 'প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ' বইয়ের মাধ্যমে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন। লিখেন বিশ্বাসের কথা, চূর্ণ করেন অবিশ্বাসের আয়না। লেখালেখির পাশাপাশি তিনি ঘুরতে এবং বই পড়তে পছন্দ করেন।

Articles: 46

7 Comments

  1. মাশা-আল্লাহ।
    কবিতা তো এমনই হওয়া চাই। ভিতরটা নাড়িয়ে দিলো।

  2. আপনার কথাসাহিত্যিকতার কলম জ্ঞান যতেষ্ট হলেও আপনার কাব্যিক ছন্দ জ্ঞান মোটেই ভালো লাগে নি। আশা করি কাব্যিক রীতিতে আরো উন্নতি দেখবো ইনশাআল্লাহ

  3. আপনার লেখা পড়লে একটা ধাক্কা লাগে , ধাক্কাটা যেন কোথায় ঠিক বুঝে উঠতে পারি না! একবার মনে হয় কলবের মাঝখানে, পরক্ষণেই মনে হয় মস্তিস্কের রন্ধ্রে রন্ধ্রে লেখা গুলো ঘুরপাক খাচ্ছে! আপনার লেখা গুলো আমার ভাবনার খোরাকি যোগায়, লেখা পড়ে শুধু মনে হয় অন্তর কতটা নির্মল হলে ; ইমান, তাকওয়ার পারদ কতটা উঁচু হলে এভাবে লিখা যায়!

    “ইয়া রাব্বে কারীম” আমার এই লেখাটুকু শুধুমাত্র আপনার সন্তুস্টি অর্জনের লিখেছি ; যা লিখতে পারিনি, হৃদইয়ের গহীনে লালিত সেই অবেক্ত কথাগুলো আপনার আরশে আজীমের দরবারে প্রেরন করলাম।

Leave a Reply to SIDDIQA SULTANACancel Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *