১.
ভাস্কর্য বলি আর মূর্তি— দুটোর শেকড় কিন্তু দিনশেষে একই উৎস থেকে উৎসারিত, এবং তা হলো— ব্যক্তির সম্মানকে যুগের পর যুগ টিকিয়ে রাখতে, তা থেকে উৎসাহিত হতে, অনুপ্রেরণা পেতে তার একটা প্রতিমূর্তি গড়ে নিয়ে নিজেদের সামনে রেখে দেওয়া।
মূর্তিপূজার গোঁড়া কোথায় প্রোথিত তা কুরআন বেশ সুস্পষ্টভাবে বিধৃত করেছে, এবং সেই সূত্রের শুরুর ঘটনায় কোনোভাবেই পূজোর মূর্তির দেখা মিলে না, সেখানে বরং দেখা মিলে ব্যক্তি সম্মান তুলে ধরবার সম্মানার্থে গড়ে তোলা ভাস্কর্যের। নূহ আলাইহিস সালামের কওমেরা তাদের সময়কার মহাত্মা মনীষীদের মৃত্যুর পরে, তাদের মহাজীবনকে স্মরণীয় করে রাখতে তাদের প্রতিমূর্তি গড়ে তুলে যা কালক্রমে একসময় পূজোর বস্তুতে পরিণত হয়। এভাবেই একসময়কার ভাস্কর্য পরিণত হয়েছে মূর্তিতে। আর, ভাস্কর্য নির্মাণ করে ব্যক্তি-জীবনকে স্মরণীয় করে রাখবার এই পরামর্শ তারা লাভ করেছিলো ইবলিশ শয়তানের কাছ থেকে।
সুতরাং, যারা খুবই পেরেশানিতে আছেন যে— মুসলমানরা কেনো ভাস্কর্য আর মূর্তি নিয়ে এতোখানি উত্তেজিত, কিংবা যারা ধরেই নিয়েছেন যে— মূর্খ মুসলমানরা মূর্তি আর ভাস্কর্যের প্রভেদ বুঝতে পারে না, তাদের উদ্দেশ্য করে বলতে চাই— ব্যক্তি সম্মানের নিমিত্তে নির্মিত ভাস্কর্য কালের পরিক্রমায় কীভাবে পূজোর বস্তুতে পরিণত হয় তা নিজেদের অতীত ইতিহাস থেকে খুব ভালোভাবেই মুসলমানরা বুঝতে শিখেছে। ফলে কোন নতুন যুগে, নতুন সভ্যতায়, নতুন সময়ে সেই একই জিনিস যতো-ই শিল্প- কলা আর সৃজনশীলতার পোশাক পরে সামনে এসে দাঁড়াক না কেনো, তার আড়ালে লুপ্ত থাকা মূর্তিপূজোর ভাবি গন্ধটা মুসলমানদের নাকে ঠিকই ধরা পড়ে। অন্যেরা যখন একটা ভাস্কর্যের দিকে তাকালে কেবল শিল্পের কলা-কৌশল দেখতে পায়, মুসলমানরা সেখানে দেখতে পায় ভবিষ্যতের কোন এক উত্তরপ্রজন্মের সেই ভাস্কর্যের পায়ে মাথা ঠুঁকে রাখবার দৃশ্য। তাই মুসলমানরা তাদের ভাবি-প্রজন্মের ঈমান রক্ষার্থে চিন্তিত হয়। ন্যাড়া কিন্তু বেলতলাতেই একবার-ই যায়, অথবা— ঘরপোঁড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলেও ভয় পায়।
২.
নিরীশ্বরবাদীরা একটা জায়গায় এসে চরমভাবে পর্যদুস্ত আর তা হলো— মৃত্যু। জীবনের সব অনিবার্য সত্যকে তারা অস্বীকার করলেও, অমোঘ মৃত্যুকে তারা অস্বীকার করতে পারে না কোনোভাবে। কিন্তু মৃত্যুকে আটকে দেওয়ার সাধ যে তাদের ছিলো না তা কিন্তু নয়। অমরত্ব লাভের চেষ্টায় যুগে যুগে তারা তাদের বহু শ্রম, বহু ধন এবং বহু সময় ব্যয় করেছে। তা সত্ত্বেও— মৃত্যুর হাত থেকে তাদের রেহাই না আগে কখনো মিলেছে, না পরে কখনো মিলবে।
অমরত্ব লাভের বৃথা চেষ্টার পরে, তাদের মনে হলো— যদি কোনোভাবে মানুষের চোখের সামনে দৃশ্যমান থাকা যায়, যদি কোনোভাবে নিজেদের অস্তিত্বের কথা মানুষকে জানান দেওয়া যায়, তাহলে হয়তো-বা, অমরত্ব না পেলেও কোনোভাবে টিকে যাওয়া যাবে মহাকালের সময়-স্রোতে।
অমরত্বের এক ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ হিশেবে তাই তারা মানুষের সামনে নিজেদের দৃশ্যমান করে রাখতে চাইলো নানানভাবে। মিশরীয় সভ্যতা হতে লব্ধ মৃত মানুষের মমি এবং আজকের সময়ের পাথরে নির্মিত ভাস্কর্য— এসবই ওই একই চিন্তা থেকে উদ্ভুত। যারা ওই সভ্যতায় মমি হয়ে থাকার মাঝে অমরত্ব খুঁজেছে, আজকের দিনে তাদের-ই উত্তরপুরুষেরা ভাস্কর্যের মাঝে অমরত্ব খুঁজে বেড়ায়।
৩.
মানুষকে বড় করে রাখে তার কাজ। কাজ মানুষের দেহকে অমরত্ব দেয় না ঠিক, কিন্তু তার প্রচেষ্টাকে অমরত্ব দেয়।জীবনবিধান হিশেবে ইসলাম খুবই বাস্তবমুখী। পাথরে নির্মিত ভাস্কর্যের আড়ালে ইসলাম কাউকে বাঁচিয়ে রাখতে চায় না, ইসলাম কাজের দ্বারা সভ্যতার সমীকরণে টিকে যাওয়ার দীক্ষা দেয়।বহু সভ্যতা আগের অনেক উদ্ধত, অহংকারী, নিপীড়নকারী মোড়লেরা কালের ধুলোয় মিশে গেছে। নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে তাদের অস্তিত্বের সবটুকু সংবাদ। তাদের পরবর্তী কোন প্রজন্ম, কোন সভ্যতা তাদের চিনতে পারেনি। কিন্তু অসংখ্য নবি-রাসুল তাদের কাজ, কর্ম, প্রচেষ্টার কারণে বহু সভ্যতা, বহু শতাব্দী পরও আমাদের সামনে চির ভাস্বর হয়ে আছেন। তাদের কোন মূর্তি নেই, ভাস্কর্য নেই। কিন্তু তাদের জীবনের অনেক খুঁটিনাটি সহ তারা আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করে চলেছেন।
ভাস্কর্য, মূর্তি কিংবা মমিতে নয়, মহাকালের স্রোতে টিকতে হয় এভাবেই। মানুষের হৃদয়ে নিজেকে এমনভাবে ধারণ করতে হয় যাতে করে মানুষ সভ্যতা থেকে সভ্যতায় আপনাকে, আপনার স্মৃতিকে বহন করে বেড়ায়।
MashaAllah you are Allah’s oli for sure. Someday everyone will know that. We need more Olis like you. Keep up the great work.
সত্য।
Excellent post. I definitely appreciate this website. Thanks!
ভাস্কর্যে আর মূর্তিতে নয়।মানুষ বাঁচুক তার কর্ম দিয়ে।
লেখা হচ্ছে লেখকের রত্ন। আমার মনে হয় , আপনি ব্যাক্তিত্বটাই ইসলাম এর রত্ন স্বরুপ।
প্রিয় নবীজির উত্তম ঊম্মত ।
Jazhakumullahu Khiar
আল্লাহ আপনার কলমকে আরো প্রশস্ত করুক। অন্তর থেকে দুয়া রইলো আপনার জন্য প্রিয়।
খুব সুন্দর উপস্থাপন
May protect us from this kind of sins
Jazakallah khairan