শরিফের স্বীকৃতি নয়, চিকিৎসা দরকার

আমাদের আশেপাশে থাকা কোনো শরিফ যদি নিজেকে শরিফা মনে করে, এবং কোনো শরিফা যদি নিজেকে শরিফ মনে করে, এতে কিন্তু আমাদের একবিন্দুও আপত্তি নেই এবং থাকার কথাও নয়।

কারণ, কোনো একজন মানসিক রোগি এসে যদি আমাদের কাছে কিছু বলে, আমরা কি তাতে আপত্তি করবো সাধারণত? শরিফ আর শরিফার ঘটনাটাও পুরোটাই মানসিক রোগ। এটা আমার কথা নয়, চিকিৎসাবিজ্ঞানের কথা।

শারীরিকভাবে একজন পুরুষ যখন নিজেকে নারী ভাবতে শুরু করে এবং একজন নারী যখন নিজেকে পুরুষ ভাবতে শুরু করে, মানসিক এই অবস্থাকে চিকিৎসাবিজ্ঞান চিহ্নিত করছে Gender Dysphoria নামে।

আমেরিকার DMS তথা Diagnostic and Statistical Manual of Mental Disorders এ এই জেণ্ডার ডিস্ফোরিয়াকে একটা মানসিক সমস্যা বলেই চিহ্নিত করা হচ্ছে। ইংল্যাণ্ডের স্বাস্থ্য গবেষণা ওয়েবসাইট NHS বলছে—‘Gender dysphoria is a term that describes a sense of unease that a person may have because of a mismatch between their biological sex and their gender identity.’

একজন নারী কেনো নিজেকে পুরুষ ভাবে? বা, একজন পুরুষ কেনো নিজেকে নারী ভাবে? মোদ্দাকথা, মানুষ Gender Dysphoria তে আক্রান্ত হওয়ার নেপথ্য কারণ কী?
অধিকাংশের মতামত হচ্ছে এর নেপথ্য সঠিক কারণ জানা যায় না স্পষ্টভাবে। কেউ কেউ হরমোনগত সমস্যার কথা বলেন। অনেকে বাচ্চাদের Social Upbringing Environment তথা বেড়ে উঠার পরিবেশটাকেও দায়ী করেন। হরমোনজনিত সমস্যাটাও একটা কারণ হতে পারে, তবে আমার ধারণা দ্বিতীয় কারণটাই এখানে মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকতে পারে।
একজন পুরুষ কেনো নিজেকে নারী ভাবতে ভালোবাসবে? অনেকগুলো কারণে হতে পারে, যেমন—

(১) খুব ছোটবেলায় সমলিঙ্গের কারো দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হওয়া। যৌন হয়রানির এই ঘটনা হয়তো তার মস্তিষ্ক থেকে মুছে যায়, কিন্তু সে=ক্সু-য়াল এক্সপেরিয়েন্সটা তার মস্তিষ্ক জমা করে রাখে এবং তার সে-ক্সু*য়াল ওরিয়েন্টেশান সেভাবেই সেট হতে শুরু করে। এই অভিজ্ঞতা নিয়ে বড় হতে থাকায়, সে পছন্দ করতে শুরু করে তার সমলিঙ্গের মানুষকেই এবং সেক্ষেত্রে নিজেকে সে ‘নারী’ ভাবতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।

(২) অনেক বাবা-মা ছোটবেলায় ছেলে বাবুকে মেয়ের বাবুর মতো করে সাজায়। মেয়েদের পোশাক পরায়। মেয়ে বাবুদের ছেলেদের পোশাক পরায়। এ-ধরণের কাজগুলো জেণ্ডার ডিস্ফোরিয়া তৈরিতে বেশ ভূমিকা রাখে বলেও বিশেষজ্ঞরা মতামত দেন।
সামাজিক আরো অনেক কারণ থাকতে পারে, তবে এই দুটো কারণকে সামনে রাখলে, এই জেণ্ডার ডিস্ফোরিয়া রোগের কারণ কী হতে পারে তার প্রাথমিক ধারণা পেতে আমাদের জন্য সহজ হয়।

জেণ্ডার ডিস্ফোরিয়া যেহেতু একটা স্বীকৃত মানসিক রোগ, তাই কোন শরিফ আর শরিফাকে নিয়ে আমাদের সমস্যা নেই। আমাদের সমস্যা হলো—তাদের এই মানসিক বিকৃতিকে চিকিৎসা দেওয়ার বদলে ‘স্বাভাবিক’ বানানোর অপচেষ্টা নিয়ে।

উন্নতমানের সেবা নিশ্চিত করে যেখানে এই রোগের চিকিৎসা নিশ্চিত করা জরুরি, যেখানে এই মানসিক অবস্থা নিয়ে আসা মানুষগুলোকে সঠিক কাউন্সেলিং, সঠিক গাইডলাইন দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা দরকারি, সেখানে এই মানসিক রোগটাকে ‘স্বাভাবিক’ হিশেবে তুলে ধরে, এটাকে ছোট ছোট বাচ্চাদের পাঠ্যবইতে তুলে দেওয়া হচ্ছে।

এই কাজের ফলাফল হবে ভয়াবহ৷ সমাজে মানসিক বিকৃতি এমনভাবে ছড়িয়ে পড়বে, সুস্থ মানুষেরাও তাদের অসাধু উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্যে এই উপায়ের আশ্রয় নিবে৷ অসৎ উদ্দেশ্য পূরণে শরিফ নিজেকে দাবি করবে শরিফা, শরিফা নিজেকে দাবি করবে শরিফ৷ সমাজে তৈরি হবে এক ভয়াবহ বিশৃঙখলা। জঘন্য পাপাচারে ভরে যাবে আমাদের চারপাশ।
তাই, পাঠ্যবই থেকে এই মানসিক রোগটাকে স্বাভাবিকীকরণের প্রচেষ্টা বাদ দেওয়াতে আমাদের কন্ঠকে সরব রাখতে হবে।

আরিফ আজাদ
আরিফ আজাদ

আরিফ আজাদ একজন লেখক এবং সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাক্টিভিস্ট। ২০১৭ সালে 'প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ' বইয়ের মাধ্যমে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন। লিখেন বিশ্বাসের কথা, চূর্ণ করেন অবিশ্বাসের আয়না। লেখালেখির পাশাপাশি তিনি ঘুরতে এবং বই পড়তে পছন্দ করেন।

Articles: 46

2 Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *