কুরআনে বর্ণিত দুটো নারী চরিত্র আমাকে মুগ্ধ করে৷ তাদের একজন সুরা কাসাসের সেই নারী যার সাথে মুসা আলাইহিস সালামের বিয়ে হয়।
সেই কন্যাদের সাথে মুসা আলাইহিস সালামের প্রথম দেখা হয় মাদইয়ানে বেশ অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে। তাদের প্রথম সাক্ষাতের সেই বর্ণনা সুরা কাসাসের মধ্যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া’তায়ালা আমাদের বিস্তারিত জানিয়েছেন।
মাদইয়ানে পালিয়ে এসে মুসা আলাইহিস সালাম একটা গাছের নিচে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। খানিক বাদে তিনি দেখতে পেলেন, অদূরে একটা কূপ থেকে কতিপয় লোক পানি উঠাচ্ছে আর তাদের দরকারি কাজ সেরে নিচ্ছে। তিনি আরো দেখলেন— কূপ থেকে একটু দূরে দুটো মেয়ে তাদের বকরীগুলোকে নিয়ে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ কূপের দিকে এগুচ্ছে না।
মুসা আলাইহিস সালাম তাদের জিগ্যেশ করলেন কেনো তারা তাদের বকরীকে পানি পান করাতে কূপের দিকে যাচ্ছে না। তখন তারা যা জবাব দিয়েছিলো, তা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া’তায়ালা কুরআনে স্থান দিয়ে দিলেন। মেয়েরা বলেছিলো—
‘আমরা (আমাদের বকরীগুলোকে) পানি পান করাতে পারি না যতোক্ষণ না কূপের পাশে থাকা রাখালেরা তাদের পশুগুলো নিয়ে সরে যায়’- আল কাসাস ২৩
আধুনিক জামানা যেখানে নারীদেরকে পুরুষদের প্রতিযোগি বানাতে ব্যস্ত, যেখানে নারীদের শেখানো হচ্ছে— পুরুষের সমান হওয়াটাই উন্নতি আর অগ্রগতির সারকথা, সেখানে কুরআন এমন দুটো মেয়েকে মঞ্চে উপস্থাপন করছে যারা কূপের দিকে পা বাড়াচ্ছে না এই কারণে যে, সেখানে পুরুষদের আনাগোনা, তাই।
কেনো পুরুষদের দেখে নারী-দ্বয় সেদিন কূপের নিকটবর্তী হওয়া থেকে বিরত ছিলো? কারণ ওই পুরুষেরা তাদের বাবা নয়, ভাই নয়, নয় মাহরাম। এমতাবস্থায় একদল পুরুষের মাঝে দুটো নারীর উপস্থিতি ঘটলে সেখানে যে ফিতনা তৈরি হওয়ার আশংকা ছিলো, সেটাকে ভয় করেছিলো তারা।
নারী এবং পুরুষের অবাধ এবং স্বাধীন মেলামেশায় ফিতনা আজকে তৈরি হচ্ছে না, এটা মানবজনমের সূচনালগ্ন থেকেই সমাজে বিদ্যমান। ওই নারী-দ্বয় এই ফিতনাকে ভয় করেছিলো৷ তাদের মধ্যে তাকওয়ার পূর্ণ বিকাশ ছিলো বলেই সেদিন তারা তাদের বকরীগুলোকে নিয়ে কূপে থাকা পুরুষদের সাথে ঠেলাঠেলি আর প্রতিযোগিতা করার চাইতে দূরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করাটাকেই শ্রেয় মনে করেছে।
মেয়েদের গল্পটার সেখানেই সমাপ্তি হয়নি। গল্পের পরের অংশে দেখা যায়— বকরীদের পানি পান করানো নিয়ে মেয়ে দুটোর অসহায়ত্ব দেখে মুসা আলাইহিস সালাম নিজ উদ্যোগে তাদের বকরীগুলোকে কূপ থেকে পানি পান করিয়ে তাদের কাছে ফেরত দেয়। মেয়ে-দ্বয় ঘরে ফিরে যায় এবং খানিক বাদে তাদের একজন পুনরায় মুসা আলাইহিস সালামের কাছে ফেরত আসে। মেয়ে দুটোর একজনের ফিরে আসার বর্ণনাটাও আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া’তায়ালা কুরআনে তুলে ধরেছেন। কুরআন বলছে—
‘অতঃপর নারীদ্বয়ের একজন সলজ্জ-পদে তাঁর (মুসা আলাইহিস সালামের) কাছে এসে বললো, ‘আমার আব্বা আপনাকে ডাকছেন। আপনি আমাদের বকরীগুলোকে পানি খাইয়েছেন, তাই আব্বা আপনাকে এর বিনিময় দিতে চান’- আল কাসাস ২৫
বিস্ময়করভাবে, এই আয়াতটায় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া’তায়ালা মেয়েটির ফিরে আসাটাকে বর্ণনা করেছেন ‘সলজ্জ-পদে’ শব্দ যুক্ত করে। কুরআনের একটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই— এখানে একটা শব্দ, একটা অক্ষরও নেই যেটা অদরকারি কিংবা অপ্রয়োজনীয়৷
ভাবুন তো— পৃথিবীর সূচনালগ্ন থেকে শুরু করে ওই দিন পর্যন্ত কতো অসংখ্য-অগনিত ঘটনা ঘটেছে ইতিহাসে, তাই না? উত্থান হয়েছে কতো সভ্যতার, ধ্বংস হয়েছে কতো হাজারো সম্প্রদায়। ঢেউয়ের উত্থান আর পতনের মতো, কতো অগনন ঘটনার সাক্ষী কালের সময়! কিন্তু, কুরআন তার সবটাকে আমাদের সামনে বর্ণনা করেনি।
এমন অনেক মহীয়ান সভ্যতা ছিলো যা আজ কালের ধুলোয় মিছে গেছে। এমন কতো তেজস্বী বীরপুরুষ বর্তমান ছিলো যারা ঘোড়া নিয়ে যখন ছুটতো, তখন আকাশ-বাতাস ধুলোতে মাখামাখি হয়ে যেতো। কিন্তু, পৃথিবীর কোথাও তাদের নাম নেই। তাদের ক্ষমতার কথা, দম্ভ আর অহংকারের কথা কেউ মনে রাখেনি।
অথচ দেখুন— একটা মেয়ে একজন পুরুষের সামনে যে সলজ্জ পদভারে এগিয়ে এসেছিলো, সেই কথা কুরআন আমাদের জানিয়ে দিয়েছে। মহীয়ান সব সভ্যতাকে পৃথিবী ভুলে গেলেও, অনেক তেজস্বী বীরের বীরত্বগাঁথা ইতিহাস থেকে বিলীন হলেও, একটা মেয়ের খুব সামান্য লজ্জার কথা, লজ্জা-ভরে এগিয়ে আসার কথা কুরআন যুগ যুগ সময়ের জন্য পৃথিবীবাসীকে জানিয়ে দিয়েছে। প্রতিদিন, পৃথিবীর কোথাও না কোথাও, কেউ না কেউ মেয়েটার কথা পড়ছে, জানছে। একটুখানি লজ্জাকে, একটু সম্ভ্রমকে কুরআন কী অপার মর্যাদায় অবিস্মরণীয় করে রেখে দিলো— ভাবুন!
তাই, আমাদের বোনেরা, যারা আল্লাহর বিধান পর্দাকে ভালোবেসে গ্রহণ করেছেন, যারা পর-পুরুষের দৃষ্টি হতে, তাদের সংস্পর্শ, সংস্রব হতে নিজেদের বিরত রেখেছেন, অতিশয় দরকার আর প্রয়োজন ব্যতীত যারা পর-পুরুষের সাথে কথা বলেন না, বলতে হলেও যারা শারীয়াহর সীমারেখার মধ্য থেকে, নিজের আব্রুকে হেফাযত করে কথা বলেন, তাদের জন্য সুসংবাদ।আপনাদের এই বেশ-ভূষা, এই চাল-চলন, এই লজ্জাটুকু আল্লাহ পছন্দ করেছেন৷ আপনারা সেই নারীদের উত্তরসূরী যারা পর-পুরুষ আছে বলে সেদিন কূপে যাওয়া থেকে বিরত ছিলো। আপনারা সেই নারীর পদচিহ্ন অনুসরণকারী, মুসা আলাইহিস সালামের সাথে প্রয়োজনীয় কথাটা বলতে এসেও যে নিজের লজ্জাটুকু ধরে রাখতে ভুলে যায়নি। সমাজ যতোই আপনাদের আলো হতে দূরের বাসিন্দা বলুক, আমরা তো জানি— প্রকৃত আলোর সন্ধানটা আপনারা পেয়ে গেছেন। আপনাদের অভিনন্দন!
কখনো দেখা হচ্ছে তো? এপারে নয়তো ওপারে?
মাশাআল্লাহ…আল্লাহ তৌফিক দিন।
আল্লাহুম্মা আমীন।
মাশা-আল্লাহ
Allah oisob narider ke hedayet korun jara apnar posondo somuho theke dure sore giyese
নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সৎ কর্মশীলদে সঙ্গে আছেন।
Alhamdulilla.????
আলহামদুলিল্লাহ।
MaSha Allah. May Allah bless you with happiness and everything that you want. Your writings are fabulous. In this world we need more and more amazing people like you. Keep going brother. May Allah SWT always guide you towards righteousness.
মাসা আল্লাহ
মাশাল্লাহ শায়েখ, চালিয়েযান❤❤