অন্তত কিছু করো

(১)

একবার একটা সফরে খাওয়ার সময় উপস্থিত হলে নবিজী সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটা ভেড়া জবাই করার কথা উঠালেন। ভেড়া জবাইয়ের কথা শুনে সাহাবিদের একজন বললেন, ‘আমি ভেড়াটাকে জবাই করবো’। অন্যজন বললেন, ‘কাটাকুটির কাজটা আমি করবো’। তারপরে আরেকজন বললেন, ‘আর রান্নার কাজটা আমি করতে চাই’।

তাদের সকলের কথা শুনে নবিজী সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘ঠিক আছে৷ তাহলে লাকড়ি জোগাড় করার দায়িত্বটা আমি নিলাম’।

নবিজী লাকড়ি কুড়াবেন— ব্যাপারটা কি সাহাবাদের পক্ষে মেনে নেওয়ার মতো? তারা হৈহৈ করে উঠে বললেন— ‘না ইয়া আল্লাহর রাসূল! এই কাজটাও আমরা করতে পারবো’।

তখন নবিজী সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আমি জানি এই কাজটাও তোমরা করতে পারবে৷ তবে— আমি সুবিধাপ্রাপ্ত হয়ে বসে থাকতে অপছন্দ করি৷ আল্লাহর এক বান্দা অন্যদের ওপর (দায়িত্ব চাপিয়ে) বসে আছে— এটা আল্লাহও পছন্দ করেন না।

(২)

নবিজী সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনের এই ঘটনা আমাকে ভালো রকমের একটা শিক্ষার মুখোমুখি এনে দাঁড় করালো৷ কোথাও বেড়াতে গেলে, কোন ট্যুর অথবা কোন ঘরোয়া আয়োজন— সম্ভব হলে যেকোনো কাজে অন্যদের সাথে হাত লাগানোর চেষ্টা করা উচিত। আমাদের বন্ধু, শুভাকাঙ্ক্ষী আর হিতাকাঙ্ক্ষীরা হয়তো সেটা আমাদের কর‍তে দিতে চাইবেন না। কিন্তু আমাদের খেয়াল রাখতে হবে— কোথাও গিয়ে একেবারে হাত পা গুটিয়ে, পায়ের ওপর পা তুলে দিয়ে অন্যদের খাটিয়ে নেওয়াটা সুন্দর নয় এবং সেটা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা এবং তাঁর নবির সুন্নাহর মধ্যেও পড়ে না।

যেকোনো অবস্থায়, যেকোনো কাজে স্বাচ্ছন্দ্যে অন্যদের সাথে শরীক হতে পারলে দুইটা লাভ হয়।
প্রথমত— নিজের ভেতরে তৈরি হওয়া বড়ত্বের বড়াইটা দমে যায়, এবং দ্বিতীয়ত— সম্পর্কের রসায়নটা আরো গাঢ় হয়৷

এ-তো গেলো একটা দিক৷ নবিজী সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনের এই ঘটনা থেকে দ্বিতীয় যে দিকটা আমাকে নাড়া দিয়ে গেলো সেটা হচ্ছে— আমাদের অনেকের জীবনে ফ্যামিলির ভালো সাপোর্ট থাকে৷ পড়াশুনার যাবতীয় ব্যয় নিয়ে কখনোই মাথা ঘামাতে হয় না৷ বাবাকে বলার আগে টাকা অ্যাকাউন্টে এসে হাজির হয়ে যায়৷ অনেকে এমন আছি যাদেরকে ফ্যামিলির খরচাপাতি নিয়ে একদম ভাবতে হয় না৷ বাবা অথবা ভাইয়ের কাঁধের ওপরে দিব্যি চলে যায় জীবন। এরকম সুবিধে থাকাটাকে দোষের বলতে চাইছি না, কিন্তু অসুবিধে হলো— এই সুবিধেগুলোকে আমরা অনেকেই স্থায়ী ধরে নিই৷

দেখুন— নবিজী সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাইলে লাকড়ি না কুড়িয়েও পারতেন৷ এই কাজটা করার জন্যে লোকের তো অভাব ছিলো না কাফেলায়৷ কিন্তু সুবিধাটা নবিজী সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিলেন না৷ একেকজন একেক কাজে যেহেতু লেগে গেছে, নবিজীও হাত লাগালেন অন্য একটা কাজে।

পড়াশোনার খরচের জন্য অথবা পরিবারের খরচাপাতি সামলানোর জন্য যাদেরকে একটুও পেরেশান হতে হয় না তাদের উচিত প্রথমত এই সুবিধেটুকুর জন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার দরবারে শুকরিয়া জ্ঞাপন করা৷ তাদের দ্বিতীয় কাজ হলো— বাবা অথবা ভাই— যারাই তাদের হয়ে দায়িত্বটুকু কাঁধে বয়ে বেড়াচ্ছে, তাদের প্রতি কিছুটা হলেও সহযোগি হওয়া৷ কিছুটা দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়ে তাদেরকে একটু হালকা করা৷

যারা পড়াশোনায় আছেন তারা টিউশনি করে অথবা পার্ট টাইম জব কিংবা ফ্রি-ল্যান্সিং করে নিজে অন্তত নিজের কিছু খরচ বহন করতে পারেন৷ পড়াশোনার বাইরে যারা আছেন, তারা ছোটোখাটো ব্যবসা, বা কোনো চাকরি অথবা অন্যকোনো হালাল উপার্জনের মাধ্যমে পরিবার আর পরিজনের কিছু দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন।

লক্ষ্য হোক— একেবারে অলস না থাকা। কিছু না কিছুতে যুক্ত থাকা সর্বদা৷ ইচ্ছাকৃতভাবে হাত পা গুটিয়ে যারা অন্যের কাঁধে ওপর বসে থাকে, আমার ধারণা— তাদের ছায়াও তাদেরকে অপছন্দ করে৷

আরিফ আজাদ
আরিফ আজাদ

আরিফ আজাদ একজন লেখক এবং সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাক্টিভিস্ট। ২০১৭ সালে 'প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ' বইয়ের মাধ্যমে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন। লিখেন বিশ্বাসের কথা, চূর্ণ করেন অবিশ্বাসের আয়না। লেখালেখির পাশাপাশি তিনি ঘুরতে এবং বই পড়তে পছন্দ করেন।

Articles: 46

3 Comments

  1. আলহামদুলিল্লাহ, ভালো লাগলো।

  2. আমি বাবার বা পরিবারের কাছ থেকে এরকমই একজন সুবিধা পাওয়া ছেলে, এর জন্যে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। আপনার এই ব্লগ টা পড়ে নতুন উদ্যমে কিছু করার অনুপ্রেরণা পেলাম। জাজাকাল্লাহু খাইরান❤️

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *